"দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত: জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ"

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA)


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য দক্ষ জনশক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গঠিত হয়েছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA - National Skills Development Authority)। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও উৎপাদনশীল জনসম্পদে রূপান্তর করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।



প্রতিষ্ঠা ও কাঠামো


জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর কাজের মূল লক্ষ্য হলো দেশের সব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে সমন্বয় করে একটি দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে।



প্রধান উদ্দেশ্য


NSDA-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—





  • দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন




  • সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সমন্বয়




  • চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি




  • জাতীয় দক্ষতা মান নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ




  • প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ও সরবরাহকারীদের একটি তথ্যভাণ্ডার (skills database) গড়ে তোলা




দক্ষতা উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতা


বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু বেশিরভাগ তরুণের কারিগরি ও পেশাগত দক্ষতা নেই, ফলে তারা উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় না। এই সমস্যা সমাধানে NSDA গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের তরুণরা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।



কার্যক্রম ও উদ্যোগ


জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে:





  1. জাতীয় দক্ষতা মান কাঠামো (NSQF) তৈরি ও বাস্তবায়ন




  2. প্রশিক্ষণ প্রদানকারীদের রেজিস্ট্রেশন ও মূল্যায়ন




  3. প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়ন ও সার্টিফিকেট প্রদান




  4. শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে দক্ষতা চাহিদা নিরূপণ




  5. কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্য ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উন্নয়ন




শিল্প খাতের সংযোগ


NSDA শিল্প খাতের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। এতে করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি সরাসরি কাজের সুযোগ পায় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানও দক্ষ কর্মী পায়। এই সংস্থাটি বিভিন্ন সেক্টর স্কিল কাউন্সিল (SSC) গঠন করে, যাতে নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক দক্ষতা চাহিদা অনুযায়ী কোর্স তৈরি করা যায়।



ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা


বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে দক্ষ জনশক্তি অপরিহার্য। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল দক্ষতা, গ্রীন স্কিল, নারী প্রশিক্ষণ, প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।



উপসংহার


জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশের জনশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক আয় বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এই সংস্থার কার্যক্রম ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *